বসন্তকাল না,তবুও কোকিলের ডাক শোনা যাচ্ছে।আমি বারান্দায় বসে আছি,ঘুমটা সকাল সকালই ভেঙ্গে গিয়েছে আজ।
আমাদের বারান্দা থেকে বহুদূর পর্যন্ত সুন্দর পরিবেশ দেখা যায়।দক্ষিন দিকটায় বড় একটা মাঠ,মাঠের আশে পাশে অনেক ধরণের সবুজ বৃক্ষ।আমি একদৃষ্টে তাকিয়ে আছি।মানুষজন কোথাও কেউ নেই।সবাই হয়তো কোয়ারেন্টাইনে।
আমার ফোন ভাইব্রেশন শুরু হলো।হাতে নিয়ে দেখি বন্ধু আনিসের কল।আমি রিসিভ করলামনা।
করোনার ভয়ে ফোন ইউজ করা প্রায় ছেড়েই দিয়েছি।নেটওয়ার্ ক তরঙ্গের মাধ্যমে যে এই ভাইরাস ছড়ায় না,তার গ্যারান্টি কে দেবে?
পরক্ষনেই ভাবলাম যে এত সকালে হয়ত কোনো জরুরি প্রয়োজনেই আনিস কল করেছে।আমি করোনার সংক্রমণের ভয় নিয়েই তার কলব্যাক করলাম।
আনিস ফোন রিসিভ করেই ঝড়ো বেগে কাঁদো কাঁদো গলায় কাশতে কাশতে বলল,"দোস্ত,মারি য়ার করোনা পজিটিভ আর ঐটাও পজিটিভ।"
আমি প্রথমে আনিসের কথা বুঝে উঠতে পারিনি।একটু সময় নিয়ে বোঝার পর জিজ্ঞেস করলাম,"দোস্ত,মা রিয়া টা কে?"
আনিস প্রায় ধমকের সুরে বললো,"আরে আমার জাস্টফ্রেন্ড মারিয়া।সেকেন্ড ইয়ারের মেয়ে।"
আমি তবুও চিনতে পারলামনা।আনিসের এতো এতো জাস্টফ্রেন্ডের মধ্যে সবাইকে আমার পক্ষে চেনা সম্ভব নয়।
আমি বললাম,"ত এখন কোথায় মারিয়া?আর ওর করোনা হলো কিভাবে?বিদেশ থেকে কেউ এসে ওকে ছুঁয়ে দিয়েছিল নাকি?
আনিস আমার বিদ্রূপাত্মক ভঙ্গিটা বুঝতে না পেরে সিরিয়াস কন্ঠে বলল,"কিভাবে হয়েছে জানিনা।কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে।আমি মনে হয় বেশিদিন বাঁচবোনা দোস্ত।শুধু করোনা না ত ঐটাও পজিটিভ"
আমি আনিসের কথাবার্তা কিছুই ধরতে পারলামনা।করোনা না হয় বুঝলাম কিন্তু"ঐটা"কি জিনিস? মারিয়ার করোনা হয়েছে এতে ও বাঁচবেনা কেন?
আমি ফ্রেশ হয়ে হোম কোয়ারেন্টাইন ভঙ্গ করে পুলিশ-আর্মির চোখ ফাঁকি দিয়ে আনিসের বাসায় গিয়ে উঠলাম।
আনিসের বাসায় জগাখিচুড়ি টাইপের কান্ড।চারিদকে কান্নার সুর। আনিসের মা-বোন সবাই থেকে থেকে মরাকান্না কেঁদেই যাচ্ছে।
আনিসের বাবা কে দেখলাম দরজার সামনে পায়চারি করছেন।
আমি আঁৎকে উঠলাম।'আনিস কি মরেই গেলো নাকি?"
সাহস করে আনিসের বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম,"স্লামালি কুম আঙ্কেল।কাহিনী কি?"
আনিসের বাবা নিরস মুখে জবাব দিলেন,"কাহিনী ত বাবা আমিও বুঝতে পারতেছিনা।তুমি ত ওর বেস্টফ্রেন্ড।কি ছু জানো?"
আমি বললাম,"না আঙ্কেল।আনিস কোথায়?"
আঙ্কেল গভীর ভারাক্লান্ত হয়ে বললেন,"ও ওর রুমেই দরজা বন্ধ করে বসে আছে।আর 'আমি বাঁঁচবোনা বাঁচবোনা'বলে চিল্লাচ্ছে।কিছু তেই কারো ডাকে সারা দিচ্ছেনা।দরোজাও খুলছেনা।"
আমি আনিসের দরোজা জোরে জোরে ধাক্কালাম কতক্ষন। ভদ্র-অভদ্র সব ভাষা ব্যবহার করে ওকে দরোজা খুলতে বললাম।কিন্তু ওর মুখে একটাই কথা,"বন্ধু তুই চলে যা।আমি বেশিদিন বাঁঁচবোনা।"
ঘটনা কিছুই বুঝতে পাচ্ছিনা।আনিসের বাবাকে বললাম ওর রুমের দরোজা ভাঙ্গার ব্যবস্থা করতে।এমন সময় আনিসের মা এসে বললেন,"বাবা ওকে মনে হয় জিনে ধরেছে।ছোটবেলাও ওকে মাঝে মাঝে জিনে আছর করতো।তখন ও এরকম ঝিম মেরে বসে থাকত।কাউকে কাছে যেতে দিতো না।"
আন্টিকে জিজ্ঞাসা করলাম,"এখন উপায় কি?"
আন্টি বললেন,"বাবা তোমার কোনো পরিচিত ওঝা-দরবেশ থাকলে একটু তাড়াতড়ি নিয়ে আসো।আমরা অনেককে ফোন করেছি।কেউ সন্ধান দিতে পারেনি।"
আমি বেশ দুঃশ্চিন্তাত পড়ে গেলাম।পরিচিত একজন আছেন।কিন্তু, বিশ্বের আকাশে এইমুহূর্তে করোনাভাইরাসের ঘনঘটা।চারদিক লকডাউন।এই দুঃসময়ে উনাকে পাওয়া যাবে কি?
আমি আবারো আর্মি-পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে আমার পূর্বপরিচিত ভাইপীর সাহেবের দরগায় গেলাম।শহরের পাশের এক গলিচিপায় তার খানকা। উনি উচ্চমার্গীয় দরবেশ টাইপের লোক।জিন-টিন উনাকে দেখলে শত হস্ত দূরে থাকে।
ভাইপীর কে পাওয়া গেল এবং আমি স্বস্তির সাথে তাকে সালাম দিলাম এবং আনিসের বিষটা বললাম।
সবকিছু শুনে ভাইপীর আমাকে নির্বিকার ভঙ্গিতে বললেন,"ভাইজান,এ ই মহামারীর সময় জিনেরা কেউ লোকালয়ে নাই।এরা নিজেদের বাসায় হোম কোয়ারাইন্টাইনে আছে।আপনি বুঝেননা কেন,মানুষের যেমন রোগ-শোক আছে,ওদেরও আছে।করোনার ভয় জিনদেরও আছে"
আমি প্রশ্ন করলাম,"ভাইপীর হুজুর,তাহলে আনিসকে জিনে ধরে নি?"
ভাইপীর ঠিক ভাইয়ের মতোই এক হাসি দিয়ে বললেন,"না, ছোট ভাই।উনাকে জিনে আছর করেনি।বললাম তো জিনেরা নিজেরাই বিরাট টেনশানে আছে এখন।"
একটু থেমে ভাইপীর আবার বললেন,"হাসান ভাই,আপনি বরং ফ্লোরা আপাকে ফোন দেন।আমি আধ্যাত্মিক ইলমে সংবাদ পাইছি করোনা রোগীরা মাঝেমধ্যে পাগলামি করে,একা একা বইসা থাকে।আপনার বন্ধুর মধ্যেও এসব লক্ষণ আছে।করোনা হইছে বোধহয়।"
আমি বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম।মাথায় আসলো মারিয়ার করোনা পজিটিভ হওয়ার ব্যপারটা।জাস্টফ ্রেন্ডের করোনা হয়েছে তাই বলে কি আনিসেরও করোনা হবে?ও কি তাহলে জাস্টফ্রেন্ডের সাথে এ কয়দিন সামাজিক দূরত্ব মেইন্টেইন করেনি?
আমি চিন্তা চিন্তা করতে করতে আনিসের বাসায় ফিরে গেলাম।পথিমধ্যে দুইজন পুলিশ আমাকে থামিয়ে ভয়ংকরভাবে জিজ্ঞেস করেছিলেন,"শহর লকডাউন।আপনি রাস্তায় করেন কি?কোথায় যান?বাসা কই?"
একের পর এক প্রশ্ন।আমি শুধু এককথায় উত্তর দিলাম,"পুলিশ ভাই,আমি করোনা টেস্ট করে আসলাম।বড়ই দুশ্চিন্তায় আছি।কালকে রিপোর্ট দিবে।দোয়া করবেন।"
উনারা প্রায় ছিটকে দূরে সরে গেলেন।আর কিছু বললেন না।
আমাদের বারান্দা থেকে বহুদূর পর্যন্ত সুন্দর পরিবেশ দেখা যায়।দক্ষিন দিকটায় বড় একটা মাঠ,মাঠের আশে পাশে অনেক ধরণের সবুজ বৃক্ষ।আমি একদৃষ্টে তাকিয়ে আছি।মানুষজন কোথাও কেউ নেই।সবাই হয়তো কোয়ারেন্টাইনে।
আমার ফোন ভাইব্রেশন শুরু হলো।হাতে নিয়ে দেখি বন্ধু আনিসের কল।আমি রিসিভ করলামনা।
করোনার ভয়ে ফোন ইউজ করা প্রায় ছেড়েই দিয়েছি।নেটওয়ার্
পরক্ষনেই ভাবলাম যে এত সকালে হয়ত কোনো জরুরি প্রয়োজনেই আনিস কল করেছে।আমি করোনার সংক্রমণের ভয় নিয়েই তার কলব্যাক করলাম।
আনিস ফোন রিসিভ করেই ঝড়ো বেগে কাঁদো কাঁদো গলায় কাশতে কাশতে বলল,"দোস্ত,মারি
আমি প্রথমে আনিসের কথা বুঝে উঠতে পারিনি।একটু সময় নিয়ে বোঝার পর জিজ্ঞেস করলাম,"দোস্ত,মা
আনিস প্রায় ধমকের সুরে বললো,"আরে আমার জাস্টফ্রেন্ড মারিয়া।সেকেন্ড ইয়ারের মেয়ে।"
আমি তবুও চিনতে পারলামনা।আনিসের
আমি বললাম,"ত এখন কোথায় মারিয়া?আর ওর করোনা হলো কিভাবে?বিদেশ থেকে কেউ এসে ওকে ছুঁয়ে দিয়েছিল নাকি?
আনিস আমার বিদ্রূপাত্মক ভঙ্গিটা বুঝতে না পেরে সিরিয়াস কন্ঠে বলল,"কিভাবে হয়েছে জানিনা।কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে।আমি মনে হয় বেশিদিন বাঁচবোনা দোস্ত।শুধু করোনা না ত ঐটাও পজিটিভ"
আমি আনিসের কথাবার্তা কিছুই ধরতে পারলামনা।করোনা না হয় বুঝলাম কিন্তু"ঐটা"কি জিনিস? মারিয়ার করোনা হয়েছে এতে ও বাঁচবেনা কেন?
আমি ফ্রেশ হয়ে হোম কোয়ারেন্টাইন ভঙ্গ করে পুলিশ-আর্মির চোখ ফাঁকি দিয়ে আনিসের বাসায় গিয়ে উঠলাম।
আনিসের বাসায় জগাখিচুড়ি টাইপের কান্ড।চারিদকে কান্নার সুর। আনিসের মা-বোন সবাই থেকে থেকে মরাকান্না কেঁদেই যাচ্ছে।
আনিসের বাবা কে দেখলাম দরজার সামনে পায়চারি করছেন।
আমি আঁৎকে উঠলাম।'আনিস কি মরেই গেলো নাকি?"
সাহস করে আনিসের বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম,"স্লামালি
আনিসের বাবা নিরস মুখে জবাব দিলেন,"কাহিনী ত বাবা আমিও বুঝতে পারতেছিনা।তুমি ত ওর বেস্টফ্রেন্ড।কি
আমি বললাম,"না আঙ্কেল।আনিস কোথায়?"
আঙ্কেল গভীর ভারাক্লান্ত হয়ে বললেন,"ও ওর রুমেই দরজা বন্ধ করে বসে আছে।আর 'আমি বাঁঁচবোনা বাঁচবোনা'বলে চিল্লাচ্ছে।কিছু
আমি আনিসের দরোজা জোরে জোরে ধাক্কালাম কতক্ষন। ভদ্র-অভদ্র সব ভাষা ব্যবহার করে ওকে দরোজা খুলতে বললাম।কিন্তু ওর মুখে একটাই কথা,"বন্ধু তুই চলে যা।আমি বেশিদিন বাঁঁচবোনা।"
ঘটনা কিছুই বুঝতে পাচ্ছিনা।আনিসের
আন্টিকে জিজ্ঞাসা করলাম,"এখন উপায় কি?"
আন্টি বললেন,"বাবা তোমার কোনো পরিচিত ওঝা-দরবেশ থাকলে একটু তাড়াতড়ি নিয়ে আসো।আমরা অনেককে ফোন করেছি।কেউ সন্ধান দিতে পারেনি।"
আমি বেশ দুঃশ্চিন্তাত পড়ে গেলাম।পরিচিত একজন আছেন।কিন্তু, বিশ্বের আকাশে এইমুহূর্তে করোনাভাইরাসের ঘনঘটা।চারদিক লকডাউন।এই দুঃসময়ে উনাকে পাওয়া যাবে কি?
আমি আবারো আর্মি-পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে আমার পূর্বপরিচিত ভাইপীর সাহেবের দরগায় গেলাম।শহরের পাশের এক গলিচিপায় তার খানকা। উনি উচ্চমার্গীয় দরবেশ টাইপের লোক।জিন-টিন উনাকে দেখলে শত হস্ত দূরে থাকে।
ভাইপীর কে পাওয়া গেল এবং আমি স্বস্তির সাথে তাকে সালাম দিলাম এবং আনিসের বিষটা বললাম।
সবকিছু শুনে ভাইপীর আমাকে নির্বিকার ভঙ্গিতে বললেন,"ভাইজান,এ
আমি প্রশ্ন করলাম,"ভাইপীর হুজুর,তাহলে আনিসকে জিনে ধরে নি?"
ভাইপীর ঠিক ভাইয়ের মতোই এক হাসি দিয়ে বললেন,"না, ছোট ভাই।উনাকে জিনে আছর করেনি।বললাম তো জিনেরা নিজেরাই বিরাট টেনশানে আছে এখন।"
একটু থেমে ভাইপীর আবার বললেন,"হাসান ভাই,আপনি বরং ফ্লোরা আপাকে ফোন দেন।আমি আধ্যাত্মিক ইলমে সংবাদ পাইছি করোনা রোগীরা মাঝেমধ্যে পাগলামি করে,একা একা বইসা থাকে।আপনার বন্ধুর মধ্যেও এসব লক্ষণ আছে।করোনা হইছে বোধহয়।"
আমি বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম।মাথায় আসলো মারিয়ার করোনা পজিটিভ হওয়ার ব্যপারটা।জাস্টফ
আমি চিন্তা চিন্তা করতে করতে আনিসের বাসায় ফিরে গেলাম।পথিমধ্যে দুইজন পুলিশ আমাকে থামিয়ে ভয়ংকরভাবে জিজ্ঞেস করেছিলেন,"শহর লকডাউন।আপনি রাস্তায় করেন কি?কোথায় যান?বাসা কই?"
একের পর এক প্রশ্ন।আমি শুধু এককথায় উত্তর দিলাম,"পুলিশ ভাই,আমি করোনা টেস্ট করে আসলাম।বড়ই দুশ্চিন্তায় আছি।কালকে রিপোর্ট দিবে।দোয়া করবেন।"
উনারা প্রায় ছিটকে দূরে সরে গেলেন।আর কিছু বললেন না।
আনিসের বাসার পরিস্থিতি আগের চেয়ে কিছুটা শান্ত।আনিসের রুমের দরোজা ভাঙ্গা হয়েছে এবং আনিসকে খাবার দেওয়া হয়েছে।কিন্তু ও সবাইকে দূরে থাকতে বলছে আর চিল্লাচিল্লি করছে,"আমি বেশিদিন বাঁচবোনা।"
আমাকে দেখে আনিসের বাবা আকুল কন্ঠে প্রশ্ন করলেন,"ওঝা পেলে বাবা?"
আমি মাথা নেড়ে উত্তর দিলাম,"না।"
আনিসের রুমের সামনে যেতেই আনিস চিল্লায়ে উঠলো,"তুই আবার এসেছিস কেনো।চলে যা রে বন্ধু।আমার কাছে কেউ আসিস না..."
আনিসের কাশিও আছে বেশ।একটু পর পর কাশছে।করোনার লক্ষণ ওর মধ্যে আছে।কিন্তু তাই বলে এরকম করছে কেন?
"আনিস,আমি ফ্লোরা আপাকে ফোন দিচ্ছি।তোর টেস্ট করা হবে।এরকম করছিস কেন?
করোনা হলে হবে।চিকিৎসা নিতে হবে।"
আমার কথা শুনে আনিসের মা ছুটে এলেন।উনি আঁৎকে উঠে বললেন,"কি!করোনা !আনিসকে করোনায় ধরেছে?"
আমি আন্টিকে বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত করলাম।আনিস শত বাধা দেওয়া সত্ত্বেও ফ্লোরা আপাকে ফোন করলাম।সেম্পল টেস্ট করার জন্য আসতে বললাম।
আনিসের পাগলামী বেড়ে গেল।এক পর্যায়ে বিছানায় লাফালাফি শুরু করল।সেন্ডো গেঞ্জি আর লুঙ্গি পড়া এক তাগড়া যুবক বিছানার উপর লাফালাফি করছে আর পাগলের মত প্রলাপ করছে,এটাও কি করোনার লক্ষন?হতে পারে,ভাইপীর ত এমনটাই বললেন।
ভাগ্য ভালো ওর জায়গা থেকে ও সরে এলোনা।আমাদের কাছ থেকে সামাজিক দূরত্ব ঠিকই রক্ষা করল।
আনিসের একটু কাছে গিয়ে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে বললাম,"বন্ধু,তু ই লাফালাফি করছিস কেন?আর বাঁচবিনা কেন?হয়েছে টা কি?আর মারিয়ার করোনা পজিটিভ এইটা শোনার পর থেকেই এরকম করছিস কেন?"
আনিস পড়নের সেন্ডো গেঞ্জিটা খুলে ফেলল।এখন ওর পড়নে শুধু লুঙ্গি।
আনিস শান্ত হলো।বললো,"বন্ধু তোকে বলবো।কিন্তু আর কাউকেই কিচ্ছুটা জানানো যাবে না।"
বলেই আনিস খুকখুক করে কাশতে আর কুককুক করে কাঁদতে লাগলো।
আমি রুমের বাইরে এসে সবাইকে বলে দিলাম যে আনিস এরকম করার কারণটা আমাকে বলবে কিন্তু কেউ আমাদের কথা শুনতে পারবেননা এবং দেয়ালে আড়িও পাতা যাবে না।রুমের দরোজাটা ভাঙ্গা হয়েছে বলেই এই কাজটা করতে হলো।
আমি আনিসের কাছ থেকে আনুমানিক তিনফুট দূরেই চেয়ারটায় আবার বসলাম।চারদিকে নিরবতা।আনিসও নিশ্চুপ।
"বন্ধু,ভাইরাস কতদিন মানবদেহে সুপ্তাবস্থায় লুকিয়ে থাকে?"
আমি বিরক্তির সাথে বললাম,"আমি বায়োলজি ক্লাস কোনোদিন ঠিকমতো করিনি।সো,এগুলা জানিনা।"
আনিস প্রায় রোবটের মতো বলল,"আমি বেশিদিন বাঁচবোনা রে।"
'কি তখন থেকে একই কথা বলছিস।ঘটনা খুলে বল।মারিয়ার করোনার সাথে তোর পাগলামীর কি সম্পর্ক?"
আনিস এবার ঝেরে কাশলো।
"দোস্ত,গত শুক্রবার মারিয়ার সাথে রুমডেট এ গেছিলাম।"
আমি বেশ অবাক হলাম।এই লকডাউনের মধ্যেও ডেট?তখন ও বুঝিয়ে বলল যে মারিয়ার বাসা ফাঁকা ছিল।আর এই ফাঁকেই ওরা ডেট টাও করে ফেলল।
"জাস্টফ্রেন্ডের সাথেও কি ডেট করা যায়?"আমি জিজ্ঞেস করলাম।
আনিস বলল,"আরে হু।একে বলে জাস্ট ডেট।"
আবার বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা।ওদিকে হয়ত আনিসের বাসার লোকজন অপেক্ষা করছেন আমার জন্য।আনিস কি বলে এইটা জানার জন্য।
"এইটাই ঘটনা দোস্ত।আজকে জানতে পারলাম করোনার সাথে সাথে মারিয়ার ঐটাও পজিটিভ।"
আমি ধমক দিলাম,"শালা ঐটা কি?প্রেগনেন্সি? মারিয়া প্রেগন্যান্ট?"
আনিস মেয়েদের মত কান্নার সুরে বলল,"না রে বন্ধু।প্রেগন্যা ন্ট হলেও সমস্যা ছিলনা।আর এত তাড়াতাড়ি প্রেগন্যান্ট হবে কেমনে?পেঁচ অন্য জায়গায়।ওর HIV পজিটিভ।বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই HIV ওর দেহে লুকিয়ে ছিল।"
আমি চেয়ার থেকে প্রায় পড়ে গেলাম।বিশাল একটা আধ্যাত্মিক ধাক্কা খেয়েছি।
নিজেকে সামলে কাঁপা কাঁপা গলায় আনিসকে জিজ্ঞেস করলাম,"দোস্ত রুমডেটে কি কি করেছিস?"
আনিস প্রায় বড় ধরনের একটা চিৎকার দিয়ে বললো,"শালা রুমডেটে কিছু করার বাকি থাকে নাকি?"
আঙ্কেল আন্টি ছুটে এলো।চিৎকার শুনে সবাই মোটামুটি ভালোই ভয় পেয়েছে।
আমার হাত পা কাঁপছে।পালপিটেশ ন শুরু হয়েছে।করোনা,এইড স মারাত্মক এই দুই রোগের বাহকের কাছ থেকে যত তাড়াতাড়ি পালানো যায় ততোই উত্তম।
আমি কেঁপে কেঁপেই অনেক কষ্টে তৎক্ষণাৎ উঠে প্রায় দৌড়ে নিচে নেমে এলাম।
আনিসের বাবা মা আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ পেলেননা।
আনিসের ছোট বোন মিলি মধুর সুরে আমাকে পেছন থেকে কৌতুহলী কন্ঠে কিছু একটা জিজ্ঞেস করছিল।কিন্তু আমার দাঁড়াবার সময় নেই।যতটা দূরে যাওয়া যায় ততোই মঙ্গল।
আমি আমার বাসায় ফিরে যাচ্ছি।দৌড়ে দৌড়ে যাচ্ছি।শহর লকডাউন।রাস্তায় কোলাহল নেই।শুধু আমার পায়ের জুতার আওয়াজ পাওয়া যায়।আমি নিজের অজান্তেই বিড়বিড় করছি,"শালার আনিস বেশিদিন বাঁচবেনা।"
আমাকে দেখে আনিসের বাবা আকুল কন্ঠে প্রশ্ন করলেন,"ওঝা পেলে বাবা?"
আমি মাথা নেড়ে উত্তর দিলাম,"না।"
আনিসের রুমের সামনে যেতেই আনিস চিল্লায়ে উঠলো,"তুই আবার এসেছিস কেনো।চলে যা রে বন্ধু।আমার কাছে কেউ আসিস না..."
আনিসের কাশিও আছে বেশ।একটু পর পর কাশছে।করোনার লক্ষণ ওর মধ্যে আছে।কিন্তু তাই বলে এরকম করছে কেন?
"আনিস,আমি ফ্লোরা আপাকে ফোন দিচ্ছি।তোর টেস্ট করা হবে।এরকম করছিস কেন?
করোনা হলে হবে।চিকিৎসা নিতে হবে।"
আমার কথা শুনে আনিসের মা ছুটে এলেন।উনি আঁৎকে উঠে বললেন,"কি!করোনা
আমি আন্টিকে বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত করলাম।আনিস শত বাধা দেওয়া সত্ত্বেও ফ্লোরা আপাকে ফোন করলাম।সেম্পল টেস্ট করার জন্য আসতে বললাম।
আনিসের পাগলামী বেড়ে গেল।এক পর্যায়ে বিছানায় লাফালাফি শুরু করল।সেন্ডো গেঞ্জি আর লুঙ্গি পড়া এক তাগড়া যুবক বিছানার উপর লাফালাফি করছে আর পাগলের মত প্রলাপ করছে,এটাও কি করোনার লক্ষন?হতে পারে,ভাইপীর ত এমনটাই বললেন।
ভাগ্য ভালো ওর জায়গা থেকে ও সরে এলোনা।আমাদের কাছ থেকে সামাজিক দূরত্ব ঠিকই রক্ষা করল।
আনিসের একটু কাছে গিয়ে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে বললাম,"বন্ধু,তু
আনিস পড়নের সেন্ডো গেঞ্জিটা খুলে ফেলল।এখন ওর পড়নে শুধু লুঙ্গি।
আনিস শান্ত হলো।বললো,"বন্ধু
বলেই আনিস খুকখুক করে কাশতে আর কুককুক করে কাঁদতে লাগলো।
আমি রুমের বাইরে এসে সবাইকে বলে দিলাম যে আনিস এরকম করার কারণটা আমাকে বলবে কিন্তু কেউ আমাদের কথা শুনতে পারবেননা এবং দেয়ালে আড়িও পাতা যাবে না।রুমের দরোজাটা ভাঙ্গা হয়েছে বলেই এই কাজটা করতে হলো।
আমি আনিসের কাছ থেকে আনুমানিক তিনফুট দূরেই চেয়ারটায় আবার বসলাম।চারদিকে নিরবতা।আনিসও নিশ্চুপ।
"বন্ধু,ভাইরাস কতদিন মানবদেহে সুপ্তাবস্থায় লুকিয়ে থাকে?"
আমি বিরক্তির সাথে বললাম,"আমি বায়োলজি ক্লাস কোনোদিন ঠিকমতো করিনি।সো,এগুলা জানিনা।"
আনিস প্রায় রোবটের মতো বলল,"আমি বেশিদিন বাঁচবোনা রে।"
'কি তখন থেকে একই কথা বলছিস।ঘটনা খুলে বল।মারিয়ার করোনার সাথে তোর পাগলামীর কি সম্পর্ক?"
আনিস এবার ঝেরে কাশলো।
"দোস্ত,গত শুক্রবার মারিয়ার সাথে রুমডেট এ গেছিলাম।"
আমি বেশ অবাক হলাম।এই লকডাউনের মধ্যেও ডেট?তখন ও বুঝিয়ে বলল যে মারিয়ার বাসা ফাঁকা ছিল।আর এই ফাঁকেই ওরা ডেট টাও করে ফেলল।
"জাস্টফ্রেন্ডের
আনিস বলল,"আরে হু।একে বলে জাস্ট ডেট।"
আবার বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা।ওদিকে হয়ত আনিসের বাসার লোকজন অপেক্ষা করছেন আমার জন্য।আনিস কি বলে এইটা জানার জন্য।
"এইটাই ঘটনা দোস্ত।আজকে জানতে পারলাম করোনার সাথে সাথে মারিয়ার ঐটাও পজিটিভ।"
আমি ধমক দিলাম,"শালা ঐটা কি?প্রেগনেন্সি?
আনিস মেয়েদের মত কান্নার সুরে বলল,"না রে বন্ধু।প্রেগন্যা
আমি চেয়ার থেকে প্রায় পড়ে গেলাম।বিশাল একটা আধ্যাত্মিক ধাক্কা খেয়েছি।
নিজেকে সামলে কাঁপা কাঁপা গলায় আনিসকে জিজ্ঞেস করলাম,"দোস্ত রুমডেটে কি কি করেছিস?"
আনিস প্রায় বড় ধরনের একটা চিৎকার দিয়ে বললো,"শালা রুমডেটে কিছু করার বাকি থাকে নাকি?"
আঙ্কেল আন্টি ছুটে এলো।চিৎকার শুনে সবাই মোটামুটি ভালোই ভয় পেয়েছে।
আমার হাত পা কাঁপছে।পালপিটেশ
আমি কেঁপে কেঁপেই অনেক কষ্টে তৎক্ষণাৎ উঠে প্রায় দৌড়ে নিচে নেমে এলাম।
আনিসের বাবা মা আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ পেলেননা।
আনিসের ছোট বোন মিলি মধুর সুরে আমাকে পেছন থেকে কৌতুহলী কন্ঠে কিছু একটা জিজ্ঞেস করছিল।কিন্তু আমার দাঁড়াবার সময় নেই।যতটা দূরে যাওয়া যায় ততোই মঙ্গল।
আমি আমার বাসায় ফিরে যাচ্ছি।দৌড়ে দৌড়ে যাচ্ছি।শহর লকডাউন।রাস্তায় কোলাহল নেই।শুধু আমার পায়ের জুতার আওয়াজ পাওয়া যায়।আমি নিজের অজান্তেই বিড়বিড় করছি,"শালার আনিস বেশিদিন বাঁচবেনা।"
----০-----