জাস্টফ্রেন্ড-মোহাম্মদ রিদওয়ান আল হাসান



বর্ষাকালের একদুপুর।
  সকাল থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে।
তানিয়া দোতলা বাসার ছাদে উঠে ইচ্ছে করেই বৃষ্টিতে ভিজছে।তার বড্ড ভালো লাগছে।বৃষ্টিতে কাকভেজা হওয়া তার ছোটবেলার অভ্যাস।
এলাকার বড় ভাই হিরু মিয়া নিচ থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে তানিয়াকে দেখছেন শুরু থেকেই।তার দীর্ঘদিনের ক্রাশ আর পছন্দের মানুষ তানিয়া।এই সুশ্রী,মায়াবী মেয়েকে ভেজা অবস্থায় আরো আকর্ষণীয় লাগছে।এই  মেয়েটির পেছনেই সে দীর্ঘদিন যাবত ঘুরঘুর করছে,কিন্তু মেয়ে কোনো সম্পর্ক করতে কিছুতেই রাজি হয়না।
তবে হিরু মিয়া এবার হটলাইনে যাবে।এলাকার ছোটভাইদের বলা হয়েছে,রাজনৈতিক ও পুলিশি সহায়তাও নিশ্চিত করা হয়েছে।আগামীকাল যেভাবেই হোক তানিয়াকে জোর করে হলেও তুলে নিয়ে যাবে সে।অনেক ধৈর্য ধরেছে হিরু মিয়া।আর না।
কি নেই হিরুর!বাবার অনেক টাকা আছে,বাইক আছে,বিলাসিতা করার সীমাহীন সুযোগ আছে।ছেলে হিসেবেও সে স্মার্ট!দারুন আপডেটেড।সবসময় হাফপ্যান্ট পড়ে বাইক নিয়ে সারা শহর ঘুরে বেড়ায়।
তবুও কেন তানিয়ার এত অপছন্দ!
 সমস্যা আরো আছে।সেটা হলো,তানিয়ার রনি নামে একজন বিএফ ও আছে!ক্লাসমেট।একই ভার্সিটিতে পড়ে।

পরদিন দশ মিনিটের ক্ষুদ্র এক অভিযানে হিরু মিয়া দলবল নিয়ে তানিয়াকে তুলে নিয়ে গেল।কাজী অফিসে গেল,বিয়ে করে নিল।আশ্চর্যজনকভাবে তানিয়া কোনো প্রতিবাদই করলোনা!মনে হয় সে এতোদিন এরকম ঘটনার জন্যই তৈরি হয়ে বসেছিল।মুচকি কমনীয় হাসি হেসে সে সেটাই প্রকাশ করছিল!
  হিরু মিয়া বড়ই অবাক হয়েছে!
তানিয়ার পরিবার হৈচৈ করে একসময় নিজেরাই দমে গেল।তার বাবা থানায় অভিযোগ জানালেও ওসি সাহেব বিরসমুখে বকে দিলো,"এগুলো ফালতু ঝামেলা নিয়ে আসেন কেন?মেয়ে নিয়ে গেছে তো ভালোই হয়েছে।মেয়েকে তো বিয়ে দিতেই হতো!অনেক খরচাপাতি হতো,কত আয়োজন,পরিশ্রম।এর চেয়ে তুলে নিয়ে গেছে।ভালো হইছে।এখন নিশ্চিন্তে ঘুমান।মেয়ে দেখবেন সুখেই আছে।"

ওসির কথা সত্যই হলো।তানিয়া ভালোই আছে।

প্রেমিকার কাছ থেকে কোনো খোঁজ খবর না পেয়ে রনি পাগলপ্রায়।সাতদিন পর সব ঘটনা জানতে পারে সে।নিজের তিনবছরের প্রেমিকা,ভালোবাসা এমনভাবে অন্যের হাত ধরে চলে যাবে!অন্যের সংসার করবে,অন্যকে মেনে নেবে!
 এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায়না।
রনি কয়েকটা স্লিপিং পিল খেয়ে ডান হাতের ধমনী শিরা গুলো ব্লেড দিয়ে সজোরে চিরতে থাকলো।মনে হয় সব দোষ হাতের ঐ রগগুলোরই।ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরুলো অনেকখানি।

  সন্ধ্যার পর অচেতন রনিকে হাসপাতালে নেয়া হলো।তার রুমের দরোজা ভেঙ্গে উদ্ধার করতে হয়েছে।

  তানিয়া এই খবর পেল।তার জাস্টফ্রেন্ড হাসান তাকে এই সংবাদ দিয়েছে।হাসান আবার রনিরও বন্ধু। কিন্তু,আশ্চর্যের ব্যাপার তানিয়ার একটুও খারাপ লাগলোনা!বরং,দীর্ঘদিনের প্রেমিকের এহেন অবস্থাতে সে মনে মনে যেন একটু খুশিই হলো!
 তবু,সে তার জাস্টফ্রেন্ড হাসান কে ফোন করে নেকি সুরে বলে,
  "তুমি ওকে বলে দিও যে আমি সুখে নেই।ওকে ছেড়ে কি করে ভালো থাকি!কিন্তু আমার তো কিছু করার নেই।তাই না?...আমি হাসপাতালে যেতে পাচ্ছিনা।তুমি প্লিজ ওকে বলে দিও..."

হাসান ভীষণ সিরিয়াস হয়ে গেলো।তার বাল্যবন্ধু রনি আর জাস্টফ্রেন্ড তানিয়ার এই অবস্থা সে মেনে নিতে পারেনা।অবশেষে ঠিক করলো যে করেই হোক হিরু মিয়ার কাছ থেকে তার জাস্টফ্রেন্ড তানিয়াকে উদ্ধার করে রনির কাছে নিয়েই যাবে।পুরোই সিনেমাটিক আইডিয়া।এইটা তার বন্ধুত্বের শপথ!

  হিরু মিয়ার এলাকায় যাওয়ার পথেই হিরু মিয়ার গুন্ডাদল হাসানের উপর আক্রমন করে।হঠাৎ ছুরিকাঘাত করে তাকে শহীদ করে ফেলে।
 

তাকে স্টেব করার সময় গুন্ডাদলের একজন তাকে বলছিল,"তানিয়া আফারে ডিস্টার্ব কর,তাই না?তানিয়া আফার অর্ডার!তোমারে আইজকা শেষ করমুই...হিরু ভাইয়ের বউরে ডিস্টার্ব!আমগর তানিয়া আফারে ডিস্টার্ব....!"

বর্ষাকাল।তাই টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে দিনজুড়ে।
হাসানের লাশ মোড়ের সামনেই পড়ে থাকে।

লাশের উপরও বৃষ্টির ফোটা পড়ছে অবিরত।
Previous Post Next Post