ভাগ্যের নির্মম পরিহাস-মোহাম্মদ রিদওয়ান আল হাসান

বাসায় টাইলস লাগানোর কাজ চলছে। তাই প্রায় সকালেই ঘুম থেকে উঠে নানুর বাসায় চলে যেতাম। নানু-মামার বাসা আমাদের বাসার কাছেই। সারা দিন নানুর বাসায় থাকা, একটু-আধটু পড়া এবং দিনের শেষের দিকে কিছুক্ষণ ক্রিকেট খেলা। একদিন মাগরিবের আজানের পর যেন একটু বেশিই অন্ধকার হয়ে পড়ল। নামাজ পড়েছিলাম কি না মনে নেই; কিন্তু নানু যখন নামাজ পড়ছেন তখনই এক জরুরি কল এলো। মা বললেন, দ্রুত বাসায় ফিরতে হবে, কাজ রাত পর্যন্ত চলবে। মায়ের সঙ্গে বাসায় থাকতে হবে। কথামতো আমি মামাতো ভাইকে নিয়ে বাসায় যাই। অগোছালো ঘরের মধ্যে ঘোরাঘুরি করছিলাম। মায়ের সঙ্গে বসে বসে মিস্ত্রিদের কাজ দেখলাম। হঠাৎ মোবাইলে নানুর কল এলো। কান্নার শব্দ। কিছু বুঝতে না পেরে হ্যালো হ্যালো করলাম কিন্তু কোনো উত্তর পেলাম না। শুধুই তীব্র কান্না। খানিকক্ষণ পর আবার ছোট মামাতো ভাইটা কল করে বলল, ‘রিদওয়ান ভাইয়া, সজীব ভাই মারা গেছে।’ আমি মনে করলাম মজা করছে। সে আবার কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে, ‘আমাদের সজীব ভাই মারা গেছে, তাড়াতাড়ি আসো।’ কী করব বুঝতে না পেরে এক মিনিট রোবটের মতো দাঁড়িয়ে থাকলাম। চোখে পানি এলো। দেখে মামাতো ভাই ফারদিন জিজ্ঞেস করল, ‘কী হয়েছে?’ কথা না বলে মামার কাছে ফোন করে নিশ্চিত হলাম যে সজীব ভাই স্ট্রোক করে মারা গেছেন। মাকে কী করে খবরটি দেব বুঝতে পারছিলাম না। দুই মিনিট পর যখন হঠাৎ করে বলেই ফেললাম, তখন তীব্র এক চিৎকারের মধ্য দিয়ে কান্না শুরু। তত্ক্ষণাৎ কাজ থামিয়ে গেলাম আমার খালার বাড়ি। চারদিক অন্ধকার। সামনে অনেক মানুষের ভিড়ের মধ্যে একটি খাটে সজীব ভাই শুয়ে আছেন। নিশ্চুপ, অসার। এ দৃশ্য দেখার পর এক মুহূর্তের জন্য কেমন যেন হয়ে গেলাম। এমন অকালমৃত্যু! আমাদের সবার হিসাবের বাইরে। এটা ভাগ্যের নির্মম পরিণতি। ভাগ্য কি মানুষের জীবনকে একটুও মূল্য দেয় না? আজ শুধু প্রার্থনা করি, প্রিয় এই মানুষটি যেন পরজনমেও ভালো থাকতে পারেন। সজীব ভাই আমাকে অনেক উপদেশ দিতেন, অনেক কিছু শিখেছি তাঁর কাছ থেকে। শেখার আরো অনেক বাকি রয়ে গেল, আর কখনো তা পূরণ হবে না।ভাগ্য সে সুযোগ কেড়ে নিয়েছে।
                                              -----০----
-কালেরকন্ঠ(অবসরে)-৩০সেপ্টেম্বর ২০১৭-মোহাম্মদ রিদওয়ান আল হাসান





Previous Post Next Post