জীবন ও প্রেম|মো.লতিফুর রহমান খান


        
ঝুম ঝুম বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভাঙল আমার ।শুয়ে শুয়ে বিছানায় হাত দিয়ে অনুভব করলাম বিছানা আংশিক ভিজে গেছে বৃষ্টির জলে। মাঝে মাঝে বাতাসের লঘুচাপ বাহিরে। আমার ঘরের তিন চতুর্তাংশ অংশে টিনের ছাদ । টিনে শিলাবৃষ্টির শব্দও হলো । ব্যাপারটা কী ? শীতকালে তো বৃষ্টি হওয়ার কথা না! এমন দুশ্চিন্তা নিয়ে বিছানায় উঠে বসতেই শুনলাম, ভাই, ঘুম ভেঙেছে ? শুভ সকাল! মাথা ঘোরালেই প্রশ্নকর্তাকে দেখতে পাব জানি। কিন্তু, মাথা না ঘুরানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে জানালা দিয়ে আকাশের মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকতে মনঃস্থির করলাম।

খবরের কাগজে পড়লাম— জলবায়ু বদলাচ্ছে! 


ভাইজান কি একটু আমার দিকে তাকাবেন ? সাধারণ আবেদন। আমি তাকালাম এবং তারপর মনে হলো আসলে আমার ঘুম ভাঙে নি এখনো! স্বপ্নে রয়েছি এখনো! স্বপ্ন ছাড়া এই দৃশ্য দেখা সম্ভব নয়। দেখলাম , বিছানার পাশে হাতলভাঙা কেদারায় আমার শ্রদ্ধেয় ফারুক স্যার। মাথায় বাবরী চুল। তারপর এক লাফ দিয়ে উঠে বসি বিছানায়, ভালো করে চেয়ে দেখি এতো আমাদের চেয়ারম্যান চাচার ছেলে হুসাইন। হুসাইনকে সবাই আদর করে একটি ছদ্মনাম দিয়েছে - হিমু!


আমি বললাম" কিরে হিমু সকাল সকাল আমার বাড়ি হঠাৎ?" হিমু বললো, "লতিফ ভাই শুরুতে গোস্তাকি মাফ করবেন।" তারপর বললো,"বয়স তো কম হলো না আজ বাদে কাল নাও থাকতে পারি! তাই আপনাকে কৈশোর-কালের লুকানো কিছু কথা আজ বলতে চাই।" আমি হিমুর কথা শুনে তখন একটু চিন্তিত হলাম! ঢাকা থেকে হিমু গ্রামে চলে এসেছে,কিন্তু কেনো(নিজের মন কে জিজ্ঞেস করলাম)? 


তারপর হিমুকে বললাম' কি এমন কথা,শুনি?"হিমু বললো," শুরু থেকে বলি শুনেন।" আমি বললাম," একটু গল্পের সুরে বলিস।অনেক দিন হলো কোনো বই পড়ি না।" তারপর " আচ্ছা ঠিক আছে, ভাইসাব "বলে হিমু তার লুকানো কৈশোরের কথা বলতে আরম্ভ করলো।


ছেলেটির নাম হিমু। বয়স তার তখন ১৫ হবে। দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলো হিমু তখন। নাসিরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সে। হিমু খুব শান্ত স্বভাবের ছেলে এবং বিভিন্ন প্রতিভার অধিকারী, তবে তা অবহেলা ও সুযোগ সৃষ্টি না হওয়ায় প্রমাণ করাটা তার পক্ষে এক প্রকার আদালতের নির্দোষ প্রমাণকারী আসামীর মতো হয়ে গিয়েছে। হিমু হাল ছেড়ে দেওয়ার বান্দা নয়,সে বিশ্বাস করে তার দয়াল আল্লাহ একদিন তাকে ঠিকি সুযোগ করে দিবেন। হয়তো এখনো সময় হয়নি প্রতিভা প্রমাণের। হিমুর একটি চমৎকার গুণ হচ্ছে সে নিজের ইচ্ছায় অন্যের সেবায় সর্বদা কাজ করতে ভালোবাসে,এতে নাকি সে সুখ খোঁজে পায়। "মানবসেবা হোক সকল কিছুর উর্ধ্বে" এটি হচ্ছে হিমুর মূল নীতি। সব কিছু চমৎকার ভাবে চলছিলো হিমুর জীবনে। হঠাৎ করে হিমুর জীবনে একজন মায়াবী চোখের নারীর আগমন ঘটে। নারীটির নাম ছিলো হুসনা। হুসনা নাসিরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়েরই একজন ছাত্রী। হুসনা হিমুর একজন সহপাঠী। হিমু এবং হুসনা দু'জনই একে অপরকে পছন্দ করতো তবে বলার মতো সুযোগ পাচ্ছিলো না।


হঠাৎ একদিন প্রকৃতির চমৎকার জোসনা রাতে হিমু  বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে বাসায় আসার পর তার মোবাইল ফোনে দেখতে পান একজন নারী হিমুকে বেশ কয়েকটা মোবাইল নাম্বারে খুদে বার্তা(এক বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক) দিয়েছে। হিমু তো চিন্তিত হঠাৎ করে একজন মানুষ এতো মিষ্টিসুরে তার সঙ্গে কথা বলছে,তবু আবার একজন নারী! বড্ড সমস্যায় পড়ে গেলো বেচারা হিমু ছেলেটা। পরদিন রাতের বেলা হিমু মনঃস্থির করলো নারীর পরিচয় নারীর মুখ দিয়ে শিকার করিয়ে ছাড়বে। যেমন কথা তেমন কাজ! পরিচয় বের হলো নারীটি হচ্ছে হিমুর সহপাঠী হুসনা। হিমু তো বাকরুদ্ধ তখন, কি করে সম্ভব? আর হুসনা কি করে হিমুর নাম্বার খুঁজে পেলো? হিমু আর বিষয়টি নিয়ে ভাবলো না। বন্ধুত্বপূর্ণ একটি সম্পর্ক সৃষ্টি হলো তাদের মাঝে। এভাবে মাস খানিক যেতে লাগলো।


একদিন তারা উভয়মিলে সিদ্ধান্ত নিলো তারা বিদ্যালয় ছুটির পর বিদ্যালয় থেকে ১০ হাত পূর্বের এক আমবাগানে  সরাসরি সাক্ষাৎ করবে দুজন। প্রকৃতির সৌন্দর্য সত্যি বড় বিস্ময়কর! আমবাগানে সারি সারি আম গাছ দাড়িয়ে আছে। গোটা বাগানজুড়ে আমের গন্ধে মুখরিত আম বাগানটি। আমি তো হিমুর মুখে আম বাগানের সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা শুনেই, বিদ্যালয়ের ১০হাত পূর্বের আম বাগানের আম ভক্ষণ করার জন্য পাগল হয়ে পড়লাম। আচ্ছা,যাই হোক,কাজের কথায় আসি।


কথানুযায়ী সাক্ষাৎ হলো, হিমু এবং হুসনা উভয়ই লাজুক মুখ করে মুচকি হাসতে লাগলো। এক পর্যায়ে হুসনা হিমুকে বলে,"আচ্ছা হিমু তুমি কাউকে মন থেকে ভালোবাসো?"

হিমু একটু ভীতু সুরে বলে উঠলো,"হ্যাঁ।আমি তোমাকে ভালোবাসি আর এটা বলার জন্য তোমার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ করা!"

তারপর সুন্দর মতোই তাদের মাঝে প্রণয় হচ্ছিলো। প্রণয়ের ১৬ মাসে পদার্পণ হবে এমতাবস্থায়  হুসনার সঙ্গে হঠাৎ করে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় হিমুর! হিমু পাগলের মতো হয়ে যায়। হিমু ছন্নছাড়ার মতো মাঠে-ঘাটে ঘুরতে থাকে। একটা অগোছালো জীবন কাটছিলো হিমুর। নানাভাবে, যোগাযোগের চেষ্টা করে সে হুসনার সঙ্গে। কিন্তু,ব্যর্থ হলো যোগাযোগ করতে। ১৪দিন(আনুমানিক) যাওয়ার পর হুসনার ঠিকানা থেকে একটি চিঠি আছে,চিঠির বিষয় হচ্ছে– প্রণয়ের বন্ধন রাখা সম্ভব না! এবং চিঠির বর্ণনায় নানা কারণ লেখা থাকে। হিমুর মনে তখন সন্দেহ জাগে এবং ভাবতে থাকে এটি হুসনার কাজ নয়,নিশ্চয়ই চিঠিটি হুসনার বোন লিখেছেন ! হুসনারা দুই বোন এবং চার ভাই এবং হুসনার বড় বোনই হিমুকে চিঠি  দিয়েছিলেন তা হিমুকে চিঠি পাওয়ার পরদিন  হুসনার ছোট ভাই আলী এসে বলে দিয়েছিল। উনার(হুসনার বড় বোন) নাম হুমাইরা। সবাই উনাকে বড়দি বলে ডাকে। হুসনার পরিবার আবার বাংলা চর্চায় গভীরভাবে মগ্ন বলা যায়। তখন হুসনার বড় বোনের চিঠিটি ভালো ভাবে পড়ে চমৎকার ভাবে শ্রদ্ধার সহিত চিঠির উত্তর লিখে হিমু ডাকপিয়ন দ্বারা চিঠি পাঠালো হুসনার ঠিকানায়। ডাকপিয়ন রহিম চাচা বললেন,"কি ব্যাপার হিমু হঠাৎ হাসান সাহেবের(হুসনার বাবা)বাড়িতে চিঠি দিচ্ছো কারণ কি? চেয়ারম্যান সাহেব(হিমুর বাবা একজন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান)জানেন কি তোমার এই বিষয়টি?" হিমু একটু সংকুচিত হলো শুনে! তারপর সাহজ করে বললো,"রহিম চাচা, আমি হাসান জ্যাঠার জানতে চাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উত্তর জানিয়ে চিঠি দিচ্ছি।" তারপর আর ডাকপিয়ন কিছু বললেন না,সাইকেল নিয়ে অন্য বাড়িতে চিঠি সংগ্রহে রওনা হলেন।চিঠির জবাব পেয়ে হুসনার পরিবার বুঝে গেলো হিমু হুসনাকে হুসনার পরিবারের বিরুদ্ধে এনে কোনো সম্পর্ক রাখবে না। তখন অবধি হুসনার বাসায় তার মেঝো ভাই ছাড়া সবাই জেনে গেছেন বিষয়টি। সম্পর্কে ফাটল বাঁধার অবস্থা তখন।সেই অবস্থাতেও হিমু ও হুসনা সম্পর্কটা ঠিক ঠাক ভাবে চালিয়ে নিতে পরিবারকে বুঝানোর উপায় সন্ধান করছিলো। ওদের সম্পর্কটা দেখে সবাই বলতো চমৎকার সুন্দর একটি জুটি তোরারে! ইউসূফ, জুলেখার প্রেম কাহিনীও হয়তো ব্যর্থ তোদের জুটির কাছে(মানুষের মতামত)। ঠিক তার মাঝেই হঠাৎ এক অন্য ব্যক্তির প্রবেশ..............


ব্যক্তিটিকে হিমু আমার কাছে ভালোবাসার কাহিনি ব্যক্ত করার সময় এক ভিন্ন জগতের হার্মফুল(Harmful) ওমেন (Woman) হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলো। এই হার্মফুল ওমেন ছিলো হুসনার খুব কাছের একজন বান্ধবী। হুসনা তার বান্ধবীকে আদর করে লতা বলে ডাকতো। লতা কিছুটা স্বার্থপর চরিত্রের নারী বললেই চলে। লতা হুসনাকে চেষ্টা করতে লাগলো বিভ্রান্ত করার হিমুর প্রতি। কারণ,কোন এক সময় লতার প্রেমিক লতার সঙ্গে প্রণয় সম্পর্ক বিচ্ছেদ করে দেয়। যাকে এই যুগে ছ্যাকা বলে। অবশ্য লতার কিছু নোংরা মানসিকতার জন্য এই বিচ্ছেদ বলে তার সহপাঠীরা মনে করেন। হুসনার ভালোবাসা এতো পবিত্র এটা লতা মেনে নিতে পারছিলো না। লতার কাছে ইলিশ মাছের কাঁটার মতো লাগছিলো বিষয়টি।


 লতা একদিন বলে ফেলে "জানিস হুসনা,গ্রামের লোকজনের কাছে শুনতেছি হিমু নাকি প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশের পর শহরে চলে যাবে।শহরেই নাকি এক সম্ভ্রান্ধ পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করবে,কর্মজীবন শুরু করবে হয়তো! চেয়ারম্যান চাচার দূর সম্পর্কের মামাতো বোনের মেয়ের সঙ্গে সম্মন্ধ হচ্ছে।"


হুসনা একটু বোকা মেয়ে। সত্য যাচাই বাছাই না করেই সে কান্নার স্রোত আবিষ্কার করে ফেললো। হিমুর প্রতি দূর্বলতা কাটানোর চেষ্টা করতে লাগলো। বিদ্যালয় ছুটির পর দেখা করা,মোবাইলে খুদে বার্তা পাঠানোর প্রতি আগ্রহ হারাতে লাগলো হুসনা! হুসনা মনকে উৎফুল্ল রাখতে নানুবাড়ি পিরোজপুর চলে যায়। অন্যদিকে হিমুকে লতা বলে," হিমু,হুসনাকে তো শহরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে পড়াশোনার জন্য! আগামীকাল হুসনাকে দুপুরের ট্রেনে শহরে দিয়ে আসবেন চাচা।" হিমুর মনে তখন কিয়ামত হওয়ার অবস্থা। হিমু পরদিন হুসনার বাড়িতে খোঁজ নিলো,জানতে পাড়লো হুসনা বাড়িতে নেই।হিমু তখন আরো দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করলো লতার কথা। হিমু তখন হুসনার বাড়িতে 'ভালো থেকো হুসনা' কাগজে লিখে আলীর হাতে দিয়ে বললো,"হুসনাকে দিস এটা, আর বলবি আমি ভালো আছি।"

 ভালোবাসার কাহিনি ব্যক্ত করার এক পর্যায় হিমু ভেঙে পড়ে এবং নিরব বোবার মতো চোখ দিয়ে জল পড়তে থাকে!


এই মুহূর্তে আমি হিমুকে বললাম,"গ্রামের লোকের কাছে শুনলাম আমাদের আগের ইমামসাব নাকি তোকে কি একটা বলেছিলেন?"

হিমু বললো,'জি, লতিফ ভাই।"


কৈশোর-কালে ইমামসাব বলে ছিলেন, "হইছে হইছে বেটা! এই ছেলেমানুষি না কইরা শুকরিয়া আদায় কর দয়াল আল্লাহ কাছে, যে ভালা পথে ফিরায় আনছে। এইসব কি খুব ভালা নাকি?" তখন হিমু বললো,"হুজুর আমি তো আজও ভালোবাসি হুসনা বেগমকে,হুসনা বেগমের কি একটু মনে হয় না আমাকে?" ইমামসাব বললেন, "ব্যাক্কল পুলা,হোন এইসব নারী বিষয়ে এতো ভাবা বা সময় দেওয়াটা কহনো  বুদ্ধিমানের কাম হইবার পারে না। তুই হুসনারে ভুইল্লা যা! তর জীবন নিয়া চিন্তা কর। লগে আসি আমি। প্রেমতো হইবো ঐ হাবীবে রহমান আমার নবী, তোর নবী,নূর নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর লেইগা রে পাগল ছেড়া। আল্লাহ তো আমগোর দুনিয়াত আনছেই আল্লাহর সান্নিধ্যে ও ভালোবাসার পাওনের উদ্দেশ্যে ইবাদত করার লেইগা। আল্লাহরে পাইতে গেলে তোর আগে রাসূল(সা.) কে সব কিছুর উর্ধ্বে গিয়া প্রেম, ভালোবাসা দিতে হইবো। দুনিয়া ও পরকালের শান্তির ব্যবস্থা তাইলে ঐ মদিনা ওয়ালাই কইরা দিবো রে হিমু।" 

এই কথাগুলো বলার পর হিমু অতি আবেগে আপ্লুত হয়ে আমার ঘর থেকে প্রস্থান করলো।



এরপরের ঘটনা যে আমার অজানা নয়,তা না।আমি নিজেই আপনাদের বলি।

হিমুকে ইমামসাব যতই বুঝান,সে হুসনাকে ভুলতেই পারছে না।কিন্তু হঠাৎ তার মাঝে অতিপ্রাকৃত এক পরিবর্তন আসে।সে নিজেকে উপলব্ধি করে আর নিজের জীবনটা গুছিয়ে নিতে কাজ করে।সে নতুন করে জীবনটা সাজায়।সেই দুঃখ আর ক্ষত থেকেই এই নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি।

তারপর প্রবেশিকা পরীক্ষায় ফাস্ট ক্লাস পেয়ে শহরে গিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ঢাকা কলেজে ভর্তি হয় হিমু! সেখানেও ভালো ফলাফল করে হিমু!



আর আজ দেখা যায়, সেই হিমু আল্লাহ ও রাসুল(সা.) প্রেমী হয়ে চমৎকার সুন্দর একটি ইহকালের জীবন কাটাচ্ছে। হিমু আজ সন্তানের বাবা। হিমুর ছেলে ওমর একজন মস্ত বড় সরকারি চিকিৎসক।

হিমু আজও গ্রামে গেলে সেই আমবাগানে যায় (হুসনার স্মরণে)ওমর কে নিয়ে। আর দীর্ঘক্ষণ বসে গল্প করে বাপ -বেটা মিলে!


এরপর অনেকদিন কেটে গেছে।হঠাৎ একদিন হিমুর পাশের বাড়ির ছেলে মাখদুম এসে বলে," লতিফ ভাই,সংবাদ শুনছেন?"

এরপর আমি যা জানতে পারলাম তার জন্য প্রস্তুত ছিলামনা।


হিমু হঠাৎ গত ১৫ই জুলাই থেকে বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছে! সংবাদটি শুনে খুব দুঃখ প্রকাশ করলাম আমি। নিয়ত করলাম হিমুকে দেখতে যাবো,কিন্তু নিয়তি তো দেখার সুযোগ দিলো না।


হাসপাতালে চিকিৎসা চলার দুইদিন পর মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে যখন আজরাঈল(আ.) আসবেন, সেই মূহুর্তে হিমু দুইটি আবেদন রেখে যায় প্রকৃতির কাছে!

প্রথমটি হচ্ছে,পৃথিবীতে সকল ভালোবাসা যেন পূর্ণতা পায় এবং অন্যটি হচ্ছে হুসনার সঙ্গে যেনো সৃষ্টিকর্তা তাকে পরকালে দেখা করিয়ে দেন,সকল সত্য বলার সুযোগ যেনো করে দেন।


তারপর হঠাৎ করে,অক্সিজেন গ্রহণ বন্ধ হতে লাগলো হিমুর। কেবিনের ভিতর থেকে কান্নার চিৎকার। হিমু!!!!!!! বলে তীব্র শব্দে কান্না করছে তার পরিবার। হিমু আর নেই এই পৃথিবীতে। হিমুর মৃত্যু সংবাদ আমি মাখদুমের কাছেই জানতে সক্ষম হই। আমি তখন মানসিকভাবে ধ্বংস হয়ে পড়ি! সবচেয়ে স্নেহের অনুজ ভাইটার শোকে স্তব্ধ হয়ে যাই,ভাষা নেই আমার এই শোক প্রকাশের! আল্লাহ হিমুর সকল গুনাহ মাফ করুন, এই দোয়া করি! নবী করিম (সা.) এর শাফায়েত কামনা করি!


পরিশেষে, এই পৃথিবী হারালো এক মূল্যবান সম্পদ। যার কারণ,হুসাইন(হিমু) ব্যক্তি স্বার্থের কথা না ভেবে মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবে শ্রম দিয়ে গিয়েছে এই সমাজে। এমন হিমু কি আজও আছে এই দুনিয়াতে যে কিনা স্বার্থহীন ভাবে কাজ করবে মানব কল্যাণে?



©"জীবন ও প্রেম"গল্পের সকল কপিরাইট স্বত্ব গল্পের লেখক মো.লতিফুর রহমান খান কর্তৃক সংরক্ষিত।


Previous Post Next Post