টিয়া পাখি ও একটি খাঁচা
ফাইয়াজ মুহাম্মদ কৌশিক
আকাশে মেঘ জড়ো হচ্ছে।শ্রাবণ মাস বৃষ্টি অসম্ভব নয়।পাখির দোকানের দিকে তাকাল মামুন।অনেক রকম পাখি।টিয়া,ময়না,কবুতর,কোয়েল বিভিন্ন রকম পাখিতে ভরা।মামুনের মনে হল,গিয়ে একবার দেখা যাক,অাহ বাসায় পাখি নিয়ে শ্রাবণি কে চমকে দিবে।মামুনের মেয়ে শ্রাবণি।৪ বছর বয়স।স্কুলে ভর্তি করা হবে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই।দোকানে গিয়ে মামুন ভাবল কি পাখি নেয়া যায়।টিয়া পাখি সে নিজেই একসময় পালত,মামুন,মামুন বলে ডাকত।ভাবল তার মেয়েকে অাজ টিয়া পাখি কিনে উপহার দিবে।দোকানে কিনতে গিয়ে টিয়া পাখির সাথে খাচাও কিনতে হলো।বৃষ্টি শুরু হয়ে যাচ্ছে।মামুন ইচ্ছা করছিল হেটে যাবে।অর্ধেক যাওয়ার পর বৃষ্টি নামবে।ভিজবে জেনেও সে বৃষ্টির মাঝেও দৌড়াবে।দৌড়ালে কেন জানি বৃষ্টি বেশি পড়ছে লাগে।অাগে প্রায়ই বৃষ্টিতে ভিজত।একা একাই ভিজত।মেয়েকে নিয়ে এখন ভিজতে মন চায়।কিন্তু চৈতি এখন ভিজতে দেয় না।মেয়ের নাকি অসুখ করবে।সেও তো ছোটবেলায় ভিজত।তার তো অসুখ হয় নাই।মূলত কোলে থাকা অবস্থায় শ্রাবণীর একবার নিউমোনিয়া হয়েছিল তাই চৈতির ভয়।পাখি হাতে নিয়ে ভেজা তো যায় না।রিকশাই নিল।
চৈতি কেমন জানি অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে।
প্রথম যেদিন চৈতি কে বিয়ে করে এনেছিল,সেদিন মেয়েটাকে খুব অাপন মনে হচ্ছিল।মনে হচ্ছিল এই মেয়েটার সাথে সম্পর্ক যুগ যুগ ধরে।বিয়ের পর সে শুধু চৈতিকেই পায় নি,পেয়েছিল এক নারী সত্তা কে।একটা মেয়ে কিভাবে সংসারী নারীতে পরিণত হয়। অার কিভাবে মা হয়ে উঠে তা বুঝেছিল ওর কাছেই থেকে।
অাগে শাড়ি পড়তে চাইত না।ওর নাকি খুব লজ্জা লাগে।অার পড়তেও পারত না।রান্নাও করতে পারত না ঠিকমত।রান্না করতে গিয়ে কোনোদিন মসলা বেশি অাবার কখনো কম।কোনোদিন পুড়িয়ে ফেলত।এইসব দেখার পর মামুন নিজেই রান্না করে ফেলত অনেক সময় চৈতি ঘুম থেকে উঠার অাগে।চৈতি ঘুম থেকে উঠে দেখত, মামুন সব রান্না করে ফেলেছে।
সে সময়কার চৈতি অার এখনকার চৈতির মাঝে কোনো মিল নেই।এখন স্লিভলেস শাড়ি পড়ে।শাড়ীর ফাকে স্তন দেখা যায়।কেমন জানি হয়ে গেছে। জামাকাপড় এখন তার খুব অাধুনিক। কিছু বলতে গেলে উল্টো মামুন কে বলে মামুন নাকি পুরোনো অামলের লোক।মামুন বুঝে না,প্রায়ই সাধারণ বিষয় নিয়ে ঝগড়া লাগে।চৈতির ইচ্ছা করে লাগে তার সাথে।মাঝে মাঝেই চৈতি কোথায় যেন যায়।জিজ্ঞেস করলে বলে বান্ধবীর বাসায় গেছে।মামুন কে ঠিকানা বলে না।মামুন জানতে চাইলে উল্টো ঝগড়া লাগে।
এসব ভাবতে ভাবতে মামুন বাসায় এসে পড়ল।মামুন দরজা খুলে দেখল কেউ নেই।অন্ধকার নেমে গেছে। চৈতি ঘরে নেই ব্যাপারটা অবাক করল।এমন তো হওয়ার কথা না। লাইট জ্বালাল।দেখল বিছানায় একটা চিঠি।তাতে লেখা
'' অাসলে তোমার সাথে সংসার করা সম্ভব নয়।অামি একটা ছেলেকে ভালোবাসতাম।অমি ওর নাম।ও স্কলারশিপ পেয়ে বাইরের দেশে চলে গেল।অার বাসা থেকে বুয়ে দেবার তোড়জোড় শুরু হওয়ায় অামি তোমায় বিয়ে করতে বাধ্য হলাম।সেদিন তোমার অফিসের প্রোগ্রামে অমির সাথে দেখা।অামি অবাক হলাম।অামরা তারপর একটা হোটেলে দেখা করি।
সেখানে ও অামার কাছে ক্ষমা চায়।অার বিদেশে তার কাছে নিয়ে যেতে চায়।হঠাৎ মনে হল অামি ওকে ফিরে পেয়েছি ওকে।অামি ওকে অনেক ভালোবাসি।তার সেই স্পর্শে অামি ঠিক থাকতে পারি নি।ওর শরীরের উষ্ণতা অামাকে সেই অাগের চৈতি করে ফেলেছে।সেই পুরোনো দিনের মত।
শ্রাবণী কে নিয়ে তুমি চিন্তা করো না।অমি ভালো রাখবে তোমার চেয়ে।সেদিন শ্রাবণী একটা টিয়া পাখি চেয়েছিল।তুমি কিনে দিতে পারলে না
ওর কটা শখ পূরণ করতে পার তুমি?অমিরা অনেক বড়লোক।
অার একটা কথা তোমায় বলি নি। তুমি শ্রাবনির অাসল বাবা না।অামি অমির সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলাম।তার ফলেই ও অামার মাঝে অাসে।তোমাকে জানানো হয়েছিল শ্রাবণি প্রি মেচারড বেবি।
অাসলে শ্রাবণি সময় ঠিকই ছিল।তোমাকে অামি ঠকিয়েছি সত্য,কিন্তু অামি অমিকে বেশি ভালোবাসি।
তুমি অামায় বলেছিলে' তুমি অামার ভাঙা দাওয়ায় রাজেন্দ্রাণী।'
অামি তোমার রাজেন্দ্রানী হতে পারলাম না। পারলে ক্ষমা করে দিও অামায়।'
বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।
শ্রাবণী ওর মেয়ে,, ওরই মেয়ে।মামুনের বুকে ব্যাথা শুরু হল।কেমন ঝাপসা হয়ে অাসছে।শ্রাবণিকে টিয়া পাখি দেয়া সম্ভব হল না।অারও ঝাপসা হচ্ছে চারদিক।
রাজধানীর বাসা থেকে
লাশ উদ্ধার
রাজধানীর একটা বাসা থেলে লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। লাশের পাশে একটা চিঠি পাওয়া গেলেও সেদিন বৃষ্টিতে ঘরে পানি ঢুকে এতে কাগজের লেখা গুলো নষ্ট হয়ে যায়।অাশেপাশের মানুষ জানায় এই ব্যক্তির নাম মামুন।তিনি স্ত্রী মেয়ে নিয়ে থাকতেন।পুলিশ তাদের সন্দেহ করেছিল খুন।তবে অনেক চেষ্টা করেও কোনো যোগার্যোগ করা যায়নি তার স্ত্রী সন্তানের সাথে। পোস্টমোর্টেম অনুযায়ী জানা যায় হার্ট এটাকে মৃত্যু। কেউ না অাসায় লাশটিকে দাফন করে স্থানীয় লোকজন।এ ঘটনায় কোনো মামলা হয় নি।
-0-