মৃত্যুর পর- মো.রিদওয়ান আল হাসান

মৃত্যুর পর

মো. রিদওয়ান আল হাসান

মানুষ মারা গেলে তার অনেক কিছু পৃথিবীতে রেখে যায়।

বেঁচে থাকতে যে সুগন্ধি আতর সে ব্যবহার করতো-

তার ঘ্রাণ রেখে যায়।

যে গজল গেয়ে সে অমনোযোগী জড় সম্পত্তিকে শোভিত করে রাখতো-

তার সুর রেখে যায়।

যে কবিতায় সে প্রেমিকার চাহনির নান্দনিক কম্পনের কথা লিখে রাখতো-

তার শব্দগুলো রেখে যায়।

যে আশায় সে রাতের অনন্ত আকাশের সাতটা মহান স্তর কল্পনা করতো-

সেই বিশ্বাসের ছাপ এঁকে যায়।



মানুষ মারা গেলে অনেক কিছু পৃথিবীতে রেখে যায়।

মায়ের আঁচলের স্পর্শ, বাবার আদর্শের স্ফুরণসহ সে বেঁচে থাকতে যা যা পেতো-

সবকিছুই সর্বমোট নেয়া নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সমপরিমাণে-

উদাস দুপুরে মহাজগতের হিসেব মিলাতে না পারা কোনো অতিদরিদ্রের- আসমানে উড়ে যাওয়া যুদ্ধবিমানের দিকে তাকিয়ে থাকার মধ্যে সে ছড়িয়ে দিয়ে যায়।



মানুষ মারা গেলে অনেক কিছু পৃথিবীতে রেখে যায়।

দুর্বৃত্তরা কেন দুর্বোধ্য- সেই উত্তর খুঁজে খুঁজে সে বেঁচে থাকার যে একটা স্বাদ পায়-

মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করে সে স্বাদের সাধ অন্যজনকে দিয়ে যায়।

অন্যায়,জুলুমাত আর অন্ধকারের কালো আঁধারে সে লুকিয়ে ঘুমিয়ে থাকার ভান করে যে জীবন কাটিয়ে যায়-

মরণকালে সে অলক্ষ্যে লক্ষ্যভেদের নিশান উড়িয়ে দিয়ে যায়।



মানুষ মারা গেলে অনেক অনেক কিছুই পৃথিবীতে রেখে যায়।

প্রিয় ফুল,প্রিয় ফল,প্রিয় বৃক্ষ,প্রিয় দৃশ্য;বেঁচে থাকতে তার যা যা প্রিয় ছিল-

সবকিছুই সে আধুনিকতার পরম্পরার চিহ্নের মাঝে প্রকাশ করে যায়।

গোলাপের বদলে বেলিফুলের ঘ্রাণ তার কেন ভালো লাগতো-

প্রচ্ছন্ন কিংবা প্রকট জিনের মাধ্যমে সেই রহস্যেরও বংশবৃদ্ধি করে রেখে যায়।

কারবলিক এসিড,ফিনাইল কিংবা ন্যাপথলিনের সংকেত না জেনেও প্রাত্যহিক ব্যবহারের যে রীতি সে পালন করতো-

তারও মোটামুটি একটা ভালো ধারা সে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করে যায়।



মানুষ মারা গেলে অনেক কিছু পৃথিবীতে রেখে যায়।

অনেক দুর্গন্ধ,পোকামাকড়,আত্মবিস্মৃত অপরাধবোধ কিংবা জলজ্যান্ত জঞ্জাল!

অনেক আকস্মিক ভুলও সে রেখে যায়,ফেলে যায় সে উর্বর আবাদি কৃষিজমিতে।



মানুষ মারা গেলে অনেক কিছু, অনেক কিছুই পৃথিবীতে রেখে যায়।

দূষিত দেহ আর বিকৃত পরিবেশে পুড়িয়ে ফেলা কোনো বৃক্ষের অপভ্রংশের মতো মনের আকুতিতে-

সে আলেয়ার আলোয় জানিয়ে দিয়ে যায় দিগন্ত আর কুয়োর প্রভেদ।



মানুষ মারা গেলে অনেক কিছু পৃথিবীতে রেখে যায়।

বেঁচে থাকতে সে যে মৌলিক বলগুলোকে একত্র না করেই একটা অকৃত্রিম মোহ ছড়িয়ে দিতো-

সেই অমায়িক ভালোবাসা সে রেখে যায়।

ছড়িয়ে যায়।

বিলিয়ে যায়।

তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য-

মানুষের সেই 'ভালোবাসা'কে ধারণ করতে এই মহাবিশ্ব সাধারণভাবে ব্যর্থ হয়।

-0-



Previous Post Next Post