এক নজরে 'মওলা আলী'

এক নজরে 'মওলা আলী'

মেরাজুল হাসান স্বরণ

একজন মুমিন মুসলিমের জীবনে হযরত আলী আলাইহিস সালামের গুরুত্ব প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে সর্বাধিক। ঈমানদারের নিকট হযরত আলী আলাইহিস সালামের গুরুত্ব কেনো এত বেশি থাকা উচিৎ তা অনুধাবন করা যায় হযরত আলী আলাইহিস সালামের অনন্ত ও সুমহান মর্যাদার দিকে প্রেমময় দৃষ্টিতে দৃষ্টিপাত করলে। হযরত আলী আলাইহিস সালামের কথা কোনো মুমিন ব্যক্তির নিকট জানতে চাইলে প্রথমেই যেই শব্দ দিয়ে কোনো মুমিন ব্যক্তি হযরত আলী আলাইহিস সালাম কে সম্বোধন করবেন তা হলো “ মওলা”, যার অর্থ ‘ অভিভাবক’,  ‘বন্ধু’,  ‘পথপ্রদর্শক’ ইত্যাদি। এর কারণ হলো হযরত আলী আলাইহিস সালাম কে ‘মওলা’ হিসেবে আমাদের নিকট পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন সমগ্ৰ সৃষ্টি জগতের মওলা প্রিয় নবীজি হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ঐতিহাসিক গাদীরে খুম নামক স্থানে লক্ষাধিক সাহাবিদের উপস্থিতিতে প্রিয় রাসূল তাঁর প্রিয় ভাই হযরত আলী আলাইহিস সালামের হাত মোবারক উপরে তুলে ধরে ঘোষণা করেছিলেন,“মান কুন্তুম মাওলাহু ফা হাযা আলীইয়্যুন মাওলা ”। এই পবিত্র কালামের বাংলা অনুবাদ করলে যার অর্থ দাঁড়ায়, “আমি (রাসূল) যার মওলা আমার আলী ও তার মওলা”। তাইতো আমরা যারা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমাদের মওলা হিসেবে মানি আমরা প্রত্যেকেই হযরত আলী আলাইহিস সালাম কেও আমাদের মওলা হিসেবে পরিপূর্ণ রূপে মানি। মওলা আলী আলাইহিস সালামের মওলায়িয়াত, ইমামত শুধু ইহ জগতেই সীমাবদ্ধ নয়, উনার কর্তৃত্ব সে তো মহান খোদার পুরো সৃষ্টি জগৎ জুড়ে। ইহলোক, পরলোক এবং এর ভিতরে ও বাহিরে যা কিছু আছে সব কিছুর উপর হযরত ইমাম আলী আলাইহিস সালামের ইমামত ও মওলায়িয়াত দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন স্বয়ং আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন । তাই বুঝি আল্লামা ইকবাল লিখেন, “আলী ইমামে মানাস্তু মানাম গোলামে আলী” অর্থাৎ আলী আলাইহিস সালাম সকলের ইমাম এবং আমি ইমাম আলীর গোলাম। 

মওলা আলী আলাইহিস সালামের মর্যাদা প্রকাশে প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আনা মাদিনাতুল ইলম ওয়া আলীয়্যু বাবুহা ” অর্থাৎ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলাম  জ্ঞানের শহর আর আমার আলী সেই শহরের দরজা। প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই পবিত্র কালামের মাধ্যমে জ্ঞানী এবং প্রেমিকগণ সহজেই বুঝতে পারবেন হযরত আলী আলাইহিস সালাম কে এবং কেন তিনি গুরুত্বপূর্ণ । আমি গোলাম কিভাবে সেই মহান সত্তার পূর্ণাঙ্গ শান বর্ণনা করবো যার মর্যাদায় দাঁড়ি বলে কিছু মহান আল্লাহ সৃষ্টিই করেন নি!

মওলা আলী আলাইহিস সালাম ছিলেন সর্বপ্রথম ইসলাম কবুলকারী , প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতদের মধ্যে সর্বপ্রথম সালাত আদায়কারী, তিনি আমিরুল মু’মিনিন, তিনি কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু, তিনি মওলা, তিনি ইমাম, বেলায়েতের বাদশা, তিনি সাবিকুনাল আউয়ালুন, তিনি সত্য, তিনি জীবন্ত কুরআন। শুধু কি এতটুকুই ? না, সবার আগে যিনি হাউজে কাউসারে যাবেন তিনি ইমাম আলী, সবার আগে যিনি জান্নাতে যাবেন তিনি ইমাম আলী, তাঁর পরিবার এবং তাঁর প্রেমিকগণ। ইলম ও হিলমে সবার আগে যিনি তিনি ইমাম আলী, রোজ হাশরের ময়দানে প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সবার আগে যিনি হাত মেলাবেন তিনি ইমাম আলী, ফেরেশতাদের সালাত ও সালাম প্রাপ্তদের মধ্যে অন্যতম হযরত আলী, সিদ্দিকে আকবর আলী, ফারুকে আজম আলী, ইমাম আলী যেদিকে থাকেন স্বয়ং আল্লাহ সেদিকে থাকেন, সকল ওলীদের ওলী মওলা আলী, সকল পীর গণের পীর হযরত আলী, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রিয়তম বন্ধু মওলা আলী, আল্লাহর সিংহ হযরত আলী, সত্যের তরবারি হযরত আলী, ইমানের শর্ত হুব্বে ইমাম আলী, তাসাউফের মালিক মওলা আলী, মুমিনের মিরাজ মওলা আলী।

শায়েরের ভাষায় লিখলে,“ ওলীদায়ে সিরাদায়ে তাজ আলী আলী, মুমিনাদে বাস এ মিরাজ আলী আলী।

হায়দারে কাররার আবু তুরাব আলী আলী,

হাশমি চেরাগ লা জাবাব আলী আলী।”

নিজেকে ইমানদার দাবি করতে হলে অবশ্যই মওলা আলী আলাইহিস সালাম কে ভালোবাসার মতো ভালোবাসতে হবে। যারা হযরত আলী আলাইহিস সালাম কে ভালোবাসে না তাদের কে প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুনাফিক বলে আখ্যায়িত করেছেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “হে আলী, মুমিন ব্যতীত তোমাকে কেউ ভালোবাসবে না এবং মুনাফিক ব্যতীত কেউ তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে না।”

আজ আমাদের আশেপাশে যারা হযরত আলী আলাইহিস সালামের মোবারক নাম শুনলেই শিয়া শিয়া বলে কর্কশ শব্দে চিৎকার চেঁচামেচি করে, হযরত আলী আলাইহিস সালামের শান যারা বলে না এবং মেনে নিতে না পেরে লুকানোর চেষ্টা করে, হযরত আলী আলাইহিস সালামের কথা উঠলে যাদের মুখ শ্রাবণের ঘন কালো মেঘের চেয়েও কৃষ্ণ বর্ণ ধারন করে, যাদের হৃদয়ে আগুন জ্বলে উঠে ওরাই হলো প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক ঘোষিত মুনাফিক। এই মুনাফিকদের থেকে নিজেদের ঈমান কে হেফাজতে সচেষ্ট হোন। গলা ছেড়ে দিয়ে বলুন,

'নারায়ে রিসালাত ইয়া রাসুলাল্লাহ 

নারায়ে হায়দারী ইয়া আলী ইয়া আলী'


মহান আল্লাহ প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর পবিত্র আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম গণের প্রেমিকদের হেফাজত করুন সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে।

----------------------------------------------------------------------------------------------

লেখক,

শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ইউরোপিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়।


Previous Post Next Post