পাখিরা (ধূসর পাণ্ডুলিপি) — জীবনানন্দ দাশ


ঘুমে চোখ চায় না জড়াতে,—

বসন্তের রাতে

বিছানায় শুয়ে আছি;—

এখন সে কত রাত!

ওই দিকে শোনা যায় সমুদ্রের স্বর,

স্কাইলাইট মাথার উপর,

আকাশে পাখিরা কথা কয় পরস্পর।

তারপর চ’লে যায় কোথায় আকাশে?

তাদের ডানার ঘ্রাণ চারিদিকে ভাসে!


শরীরে এসেছে স্বাদ বসন্তের রাতে,

চোখ আর চায় না ঘুমাতে;

জানালার থেকে ওই নক্ষত্রের আলো নেমে আসে,

সাগরের জলের বাতাসে

আমার হৃদয় সুস্থ হয়;

সবাই ঘুমায়ে আছে সব দিকে,—

সমুদ্রের এই ধারে কাহাদের নোঙরের হয়েছে সময়?



সাগরের ওই পারে— আরো দূর পারে

কোনো এক মেরুর পাহাড়ে 

এইসব পাখি ছিল;

ব্লিজার্ডের তাড়া খেয়ে দলে দলে সমুদ্রের ’পর

নেমেছিল তারা তারপর,—

মানুষ যেমন তার মৃত্যুর অজ্ঞানে নেমে পড়ে!

বাদামি— সোনালি— শাদা— ফুটফুট ডানার ভিতরে

রবারের বলের মতন ছোটো বুকে

তাদের জীবন ছিল,—

যেমন রয়েছে মৃত্যু লক্ষ লক্ষ মাইল ধ’রে সমুদ্রের মুখে

তেমন অতল সত্য হয়ে!




কোথাও জীবন আছে,— জীবনের স্বাদ রহিয়াছে,

কোথাও নদীর জল রয়ে গেছে— সাগরের তিতা ফেনা নয়,

খেলার বলের মতো তাদের হৃদয়

এই জানিয়াছে;—

কোথাও রয়েছে প’ড়ে শীত পিছে, আশ্বাসের কাছে

তারা আসিয়াছে।


তারপর চ’লে যায় কোন্ এক ক্ষেতে

তাহার প্রিয়ের সাথে আকাশের পথে যেতে যেতে 

সে কি কথা কয়?

তাদের প্রথম ডিম জন্মিবার এসেছে সময়!


অনেক লবণ ঘেঁটে সমুদ্রের পাওয়া গেছে এ মাটির ঘ্রাণ,

ভালোবাসা আর ভালোবাসার সন্তান,

আর সেই নীড়,

এই স্বাদ— গভীর— গভীর।

     

আজ এই বসন্তের রাতে

ঘুমে চোখ চায় না জড়াতে; 

ওই দিকে শোনা যায় সমুদ্রের স্বর

স্কাইলাইট মাথার উপর,

আকাশে পাখিরা কথা কয় পরস্পর।

Previous Post Next Post