আমার ভিতরে কোনো দল নেই - নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

 

আমার পিছনে কোনো দল নেই, আমার ভিতরে

দলবদ্ধ হবার আকাঙ্ক্ষা নেই, আমি

সাদা কালো লাল নীল গাং-গেরুয়া জাফরান বাদামি

হরেক রঙের খেলা দেখে যাই।

একলা-পথে হাঁটতে-হাঁটতে একলা আমি ঘরে

ফিরে যাব। যেতে-যেতে ধুলোবালি জঞ্জালে ও ঘাসে

খানিকটা প্রশংসা আমি রেখে যাই।

দেখি শুকনো পাতা উড়ছে হিলিবিলি সন্ধ্যার বাতাসে।

আমার পিছনে কেউ নেই এখানে। কস্মিনকালেও

কাউকে আমি ডাক দিয়ে বলিনি,

চলো যাই, রোদ্দুরে গলিয়ে নেব গিনি,

হাত বাড়িয়ে টেনে আনব অহঙ্কারী বটগাছের মাথা।

আমি বলি, দশজনে পঁচিশটা পথে যেয়ো,

প্রত্যেকে আড়াইটে করে পেয়ে যাবে শুকনো শালপাতা।

তার মানে কি এই যে, আমি রাখিনি বিশ্বাস

সঙ্ঘবদ্ধ কাজে?

দেখিনি কীভাবে কলে-কারখানায় বাঁধে ও ব্যারাজে

কিংবা পূর্তবিভাগীয় নির্মিতিমালায়

সভ্যতা নিষ্পন্ন হয়? বালিহাঁস

সরে গিয়ে জায়গা দেয় পৌরহিতসাধিনী সভাকে;

জলা ও জঙ্গল হটে যায়।

চৌষট্টি ফ্লাটের হর্ম্য মেঘের বালিশে মাথা রাখে।

সমস্ত দেখেছি আমি, বুঝেছি যে, মানুষের মিলিত উদ্যম

ব্যতিরেকে

এমন সহস্রফণা

উপরন্তু একই সঙ্গে এমন বিষাক্ত-মনোরম

উল্লাসের আবির্ভাব সম্ভব হত না।

কিন্তু এই সম্ভবপরতা তাকে কী দেয়, কতটা

দেয়, যে সভ্যতা অর্থে অন্য-কিছু বোঝে?

সভ্যতার ভিতরে যে খোঁজে

অন্য চরিতার্থতা, সে অন্য পথে যায়।

দলবদ্ধতার ঘটাপটা

দুই পায়ে মাড়িয়ে তাকে একবার নিজের মধ্যে উঁকি

দিয়ে কথা বলতে হয় নিজস্ব ভাষায়,

একবার দাঁড়াতে হয় নিজস্ব ইচ্ছার মুখোমুখি।

আমার ভিতরে কোনো দল নেই, দলবদ্ধতার

আনন্দ অথবা গ্লানি, কোনোটাই নেই।

আকাশে অজস্রবর্ণ খেলাধুলো সমাপ্ত হলেই

ফিরতি-পথে জঞ্জালে ও ঘাসে

খানিকটা প্রশংসা রেখে আমি দেখি, এন্তারএন্তার

হিলিবিলি পাতা উড়ছে সন্ধ্যার বাতাসে।

Previous Post Next Post